যে যায় লঙ্কায়, সে রাবণ হইলে সমস্যা কি?

যে লঙ্কায় যায় সে রাবণ হইলে তো ভালোই হইতো। মানে লঙ্কার ডমেস্টিক পলিসিতে তো রাবন নিতান্ত খারাপ না। ফরেন পলিসিতে গিয়ে যুদ্ধ লাগায় আসছে, সেটা একটা যন্ত্রণা। কিন্তু নিজ রাজ্যে তো রাবণকে অত্যাচারী রাজা কোথাও বলা দেখিনাই। বরং তাকে বেশ জনপ্রিয় রাজা বলে শোনা যায়।

শ্রীলঙ্কায় রাবণকে রাজা জ্ঞানে সম্মান করা হয়, রামকে না। লঙ্কান হিন্দুরা মোস্টলি এখনও শৈব, রাবনের অনুসারে, বৈষ্ণব না (রামকে বিষ্ণুর অবতার ধরে)। এবার আমি জোতিবা ফুলের বা দলিত পুরাণ লাইন ধরলে রাম/বিষ্ণু হচ্ছে আর্যদের শক্তি আর শিব/রাবণ হচ্ছে অনার্যদের শক্তি।

রাবণ অর্ধেক রাক্ষস, অর্ধেক দেবতা (ডেমিগড)। তার ভাই ফুলদেবতা কুবেরকে পরাজিত করে সে রাজা হইসে লো বর্ন হয়েও (মা কৈশেকি রাক্ষস)। রাজা হয়ে শুক্রাচার্যকে মাস্টার রেখে পলিটিকাল সায়েন্স (অর্থশাস্ত্র) শিখসে। পিএইচডি ওয়ালা রাজা, কারণ সাধনা করে ব্রহ্মার কাছে বর পাইসে, আয়ূর্বেদে থিসিস লিখসে। তার মানে রামের মতন উত্তরাধিকার সূত্রে রাজ্যাধিকার পায়নাই, খাইট্টা রাজা হইসে। কাইন্ড অফ ফিলসফার কিং। রামের থিসিস কই?

রাবণ এতো শক্তিশালী শৈব ছিল যে তাকে হারানোর জন্য রামকে অকালে দূর্গা পূজা করা লাগসিলো (অকালবোধন, রাবণ বধের কারন)–যেটা এখন আমাদের শারদীয় দূর্গোৎসব। আর ওইদিকে রাবণ করতেসিলেন শিবের পূজা, আর দূর্গা হইতেসেন আরবিট্রার–ব্রহ্মা পুরোহিত, রাবণের প্রপিতামহ।

দেয়ারফোর রাম-রাবণের যুদ্ধ হচ্ছে বিষ্ণু বনাম শিবের যুদ্ধ, সাদা বনাম কালো, (আর্য বনাম অনার্য(?)), দলিত বনাম বর্ণহিন্দু (কল্পনা), আর ব্রহ্মা এখানে এডজুডিকেটর। এদেরকে আবার পরে এক/সমান বানায়ে ফেলা হইসে একক সমাজ সিন্থেসাইজ করার জন্য (কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ইত্যাদি), যেটার উদাহরণ মহাভারত এরাতে পাওয়া যায় যেখানে একক শক্তি হিসেবে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ট্রায়াডকে তোলা হয়। কিন্তু অতো কাহিনীতে না যাই। এগুলা সবই ন্যারেটিভের উপরে ন্যারেটিভ–ওই কথা বলা শুরু করলে দিন ফুরাবে এন্ড অফ কোর্স আই মে বি রং।

তবে লঙ্কান ওরাল পুরাণে সুপর্নখার নাক লক্ষ্মণ আগে কাটসে সুপর্নখা রামরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রপোজ করার পরে, তারপর সুপর্নখার দুই ভাইরে মারসে–সেই চ্যাতের থেকে জ্ঞানী শৈব রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করসে। ভার্সন আরও অনেক আছে। কাজেই রাবণ আসলে মানুষ ভালো, তার আশেপাশের লোকজন তারে ভুল বুঝায়। ( 😀 )

কিন্তু বাল্মিকির রামায়ন ধরলেও কিন্তু রাবণের চেয়ে রাম ভয়াবহ। রাবণ সীতারে অপহরণ করসে, ভেরি ব্যাড। রাম তারে উদ্ধার করসে, ভেরি গুড। তারপর কি করসে? লব আর কুশ জন্মাইসে–প্রজারা তাদের প্যাটার্নিটি টেস্ট চাইসে। তাই রাম সীতারে বলসে সতীত্ব প্রমাণ করতে আগুনে ঝাঁপ মারো–দেয়ারবাই সতীদাহের নজির স্থাপন করসে।

কাজেই রাবণ না, বরং আমাদের নেতারা রাম হয়ে যান, এটাই সমস্যা। প্রজারঞ্জন করতে গিয়ে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার নামে নিজের ভালোবাসার মানুষকেও আগুনে ঠেলে দিতে দ্বিধা করেন না। রাম হইলেন পৌরানিক পপুলিস্ট। আর সেই পপুলিজমের জোয়ারেই দুনিয়া ভাসতেসে।

কাজেই মোদিসাহেব রামরাজ্যই স্থাপন করতেসেন। খেলা ভুল নাই, ঠিকই আছে।

তবে–

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাং।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।। (ভগবতগীতা, কর্মযোগ, ৭-৮)

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.