ইন্ডিয়া হলো বাংলাদেশের কিশোরী গার্লফ্রেন্ডের মতো। নিজে তো কিছু করবেই না, অন্যরা কিছু করলে হিংসায় মরে যাবে। চীনের প্রেসিডেন্ট আসছে, কিছু টাকাপয়সা দিয়ে গেছে তাই দেইখা ইন্ডিয়া এমন জ্বলা জ্বলছে যে, ডাইকা বাসায় নিয়ে আসা লাগছে। এরপর বাসায় নিয়া, দরজার খিল লাগায় দিইয়া বলে, চলো আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখি এবং ভাপা ইলিশ খাই। কাজের কাজ যা করার কথা ছিল, সে কথার কোন খোঁজ নাই। আমার এই কথায় অনেকে আবার ক্ষিপ্ত হয়ে যাবেন। কারো কারো মতে এবার আমরা নাকি অনেক কিছু আদায় করে ফেলেছি ইন্ডিয়া থেকে। কি আদায় করেছি?
ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টে এসে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করেছেন। আমরা এতে মারাত্মক খুশি, আমাদের গর্বের শেষ নেই।
আর এদিকে মমতাকে বাংলা হিন্দী ইংলিশ মিলিয়ে এত ভিক্ষা করার পরেও এক ফোঁটা পানি ও আনা গেলনা।
উনি বললেন কি- তিস্তায় নাকি পানি নাই। তিস্তার পানি আসবে কোত্থেকে?
তিস্তার নদীপথে বাঁধের পর বাঁধ দিলে পানি থাকবে কোত্থেকে? আকাশ থেকে? অবশ্য আকাশ থেকেই পানি আসে, বৃষ্টি দিয়ে। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানির ন্যায্য হিসসা পর্যন্ত আমরা পাই না। প্রথমত উজানের পানি প্রত্যাহারের কোন তথ্য আমাদের দেয়া হয়না তো হয়না, বৃষ্টির পানির ন্যায্য হিসসা পর্যন্ত আমাদের দেয়া হয়না। ঠিক ঐটুকুই আমরা ভিক্ষা করতে গেছিলাম।
কিন্তু কোনভাবেই মমতাকে টলানো গেলনা। কেন?
কারণ পপুলার ম্যান্ডেট। তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত, তার একটা ভোটার বেইজ আছে।
তার একটা জনগণ আছে যাদের স্বার্থ তার দেখা উচিৎত, যদি তা না করেন তবে পরের নির্বাচনে তিনি বাঁশ খাবেন।
কিন্তু আমরা যখন নেগোশিয়েট করি, তখন আমরা আমাদের জনগনের স্বার্থ দেখিনা। আমাদেরকে কূটনৈতিক স্বার্থটা আগে দেখতে হয়। কেন?
কারণ আমাদের পপুলার ম্যান্ডেট নাই। কাজেই নরেন্দ মোদিকে খুশি করা, মমতা ব্যানার্জীকে খুশি করা আমাদের কৃষকদের খুশি করা থেকে বেশি জরুরী।
যাহোক, মমতা ব্যানার্জীর কাছে ফেরত যাই, সে আরেক জিনিস ভাই।
সে আমাদেরকে বললো ভাই, তিস্তার পানি দিতে পারবোনা, দুধকুমার আর ধরলার পানি নিয়ে যা।
আরেহ ভাই, দুধকুমার আর ধরলার পানি বাংলাদেশ এমনেই পায়, বেসিকলি আমরা উনাকে তিস্তার পানি দিতে বললাম, তিনি বললেন, হারামজাদা, দুধকুমার আর ধরলার পানি কাইড়া নি নাই, এজন্য শোকর কর।
কাজেই এই দিক দিয়ে চিন্তা করলে, বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক কিশোরী প্রেমিক প্রেমিকার মত না। আমাদের সাথে ভারতের সম্পর্ক অনেকটা মালিক আর কৃতদাসের সম্পর্কের মতো। তাদের যা যা প্রয়োজন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ টা দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করে এসেছি। কিন্তু আমাদের যতটুকু অধিকার, যেটা আমাদের পাবার কথা, অতটকু তারা আমাদের দিতে রাজি নয়।
কেন?
কারণ আমরা ভিক্ষা করতে গেছি। অথচ আমরা কিন্তু নেগোশিয়েট করতে পারতাম। আমরা বার্গেইন করতে পারতাম। কারণ আমাদের কাছে অনেকগুলো বার্গেইনিং চিপ ছিল। কিন্তু, আমরা তো এসব চিপ গুলো চকলেট চিপের মতো বিতরণ করে দিছি ইন্ডিয়ার কাছে। আর এই ফরেন পলিসির কারণে কি হইছে?
আজকে বাংলাদেশের মতো একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হয়ে গেছে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বঙ্গ থেকে কম। এই যে, পশ্চিম বঙ্গের একজন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি যখন দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চান, তিনি তখন তা কেন্দ্র দিল্লির কাছ থেকে আদায় করে ছাড়েন।
আর এদিকে আমরা বাংলাদেশ, একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হয়ে আমাদের জনগণের স্বার্থ আদায় করতে পারিনা।
আমরা দেশে এসে বলি কি?
আমরা তো ভাটির দেশ। পানি যদি আসা শুরু করে তাহলে ওরা কোনভাবেই আটকাতে পারবেনা।
কাজেই আমাদের অফিশিয়াল ফরেন পলিসি হচ্ছে, ইন্ডিয়ার সাথে কোন ধরনের বার্গেইনিং করার দরকার নেই, আমরা যাতে দোয়া করি, যাতে এত বৃষ্টি হয়, যাতে ওদের ওখানে পানি অতিরিক্ত হয়ে যায়, আর সেই পানির কিছুটা বাঁধ খুলে আমাদেরকে দেয়। এটা হচ্ছে আমাদের ফরেন পলিসি।
আচ্ছা তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের এত টাকা দিয়ে এতগুলো কূটনীতিক পোষার দরকার কি? আমাদের ফরেন মিনিস্টারের দরকার কি?
আমরা তো আমাদের কুদ্দুস বয়াতি কে হায়ার করে নিয়ে গেলেই হয় আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে, তিনি খালি সারাদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসে বসে গান গাইবেন, “আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ মেঘ দে”, আর বেশি বেশি বৃষ্টি হলে আমরা সেখান থেকে পানি পাবো। এটাই আমাদের ফরেন পলিসি আমাদের তো বার্গেইন করার দরকার নেই।
আমাদের অর্জন কি? আমরা বিদ্যুৎ পাইছি, আমরা বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে পারবো ইন্ডিয়া থেকে, আর এই বিদ্যুৎ (রামপাল বিতর্কে না ই বা গেলাম), এই বিদ্যুৎ টা আমরা নেপাল থেকে আনতে পারতাম, ভুটান থেকে আনতে পারতাম, অনেক কম খরচে। কিন্তু সেটা কেন করা যাচ্ছেনা? কারণ ইন্ডিয়া সেটা দিবেনা। নেপাল ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে হলে ইন্ডিয়ার উপর দিয়ে আনতে হবে এবং ইন্ডিয়া সেই চুক্তিতে সাহায্য করবেনা।
আমরা কি, এই বিষয়ে একটু মনোযোগ দিতে পারিনা? আমরা সারাদিন ইন্ডিয়াকে খুশি করার পিছে না লেগে, আমাদের কি বিকল্প পররাষ্ট্রনীতিতে যেতে পারিনা? আমাদের কি সেইটুক অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই?
আমরা পৃথিবীর সবচাইতে বড় গ্রোয়িং ইকোনোমির একটা। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কেন আমরা একটা ফরেন পলিসির লিডার হতে পারবোনা?
আমরা কেন ইন্ডিয়া, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা যাদের ইন্ডিয়া শোষণ করে তাদেরকে নিয়ে একটা কমন মার্কেট বানাতে পারিনা ? কেন আমরা আমাদের পারষ্পরিক সহযোগিতাটা শক্তিশালী করতে পারিনা? কেন আমরা ইন্ডিয়াকে পুশ ব্যাক করতে পারিনা? কেন আমরা লিডার হতে পারিনা? কেন আমাদের অন্যের দান খয়রতের জন্য বসে থাকতে হয়?
এরকম ঘটনা যে পৃথিবীর অন্য কোথাও ঘটেনি তা কিন্তু নয় , বরং এটি খুবই কমন একটা পলিসি। যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলো বড় একটা দেশের প্রতিবেশী থাকে, তার এক জোট হয়ে, বড় দেশ থেকে তাদের অধিকার আদায় করে থাকে।
যেমন। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ক্যারিকম(CARICOM) নামের একটা সংগঠন ছিল, সেন্ট্রাল আমেরিকায়, সেন্ট্রাল আমেরিকার একটা কমন মার্কেট ছিল, এইরকম কমন মার্কেট গুলো তাদের প্রতিবেশি বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো থেকে তাদের স্বার্থ বের করে নেয়ার জন্য কার্যকর ছিল।
কোথায় আমাদের তেমন ইনিশিয়েটিভ? কোথায় আমাদের নেপাল ভুটানের সাথে কাজ? কোথায় আমাদের শ্রীলঙ্কার সাথে কাজ, কোথায় আমাদের রিজিয়নাল কো অপারেশন?
অথচ আমরা ইন্ডিয়ার সাথে ডিফেন্স কো অপারেশন করি, অথচ গত ২০ বছরে আমাদের একমাত্র সংঘর্ষ হয়েছিল, ইন্ডিয়ার সাথে।
ডিফেন্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটা গ্লোবাল লিডার অথচ সেখানে আমরা তিস্তার পানি আনতে পারলাম না।
আমি আসলে এই সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে না কেননা এর মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে, কিন্তু এগুলো ট্রিভিয়াল, এগুলো নিয়ে লাফালাফি করার কোন মানেই হয়না। এগুলো খুবই ছোট অর্জন। অথচ আমাদের উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা যারা চাষ করার জন্য পানি পায়না, যার ফলে আমাদের উত্তরবঙ্গ ধীরে ধীরে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে, যেখানকার অর্থনৈতিক উৎপাদন থেকে আমরা বঞ্চিত , সেটার গুরুত্ব যদি আমাদের সরকার অনুধাবন করতে না পারি, সেটাকে সামনে রেখে যদি আমরা আমদের পররাষ্ট্রনীতিকে না সাজাই, তবে আমাদের অর্থনীতিকে আমরা সেখানে পৌঁছিয়ে নিয়ে যেতে পারবোনা, যতটুক এটা যেতে পারে।
কারণ সত্যটা হলো, আমার দেশের সরকার আমাদের কৃষকদের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তাই তাদের স্বার্থ আমাদের সরকার দেখেনা । ঠিক এই কারণে বাংলাদেশের কৃষকের থেকে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকের ক্ষমতা বেশি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের কৃষক ভোট দিয়ে তার সরকার নির্বাচন করে।
আর আমার কৃষক খরায় পুড়ে যায়, আর বন্যায় ভেসে যায়।
সাবটাইটেল- Jim Jubabir.
ইন্ট্রো লিখেছে- Neel Emon.
Need these types of article more
Sure. I will try and work more on these topics.
অনেক সুন্দর ভাই। এই ধরনের মন্তব্যগুলো যদি আমাদের দেশের মানুষ গুলো বুঝত, তাহলে হয়তো আমাদের এত খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
লেখাগুলো পড়লাম। অন্যান্য ভিডিওগুলোর মত যদি এটার-ও ভিডিও বানাতেন, তাহলে ভাল হত।