হাহা রিয়েক্টের ক্ষমতা

বিশ্বের যাবতীয় সমস্যার জন্য এই এক হা হা রিয়েক্ট দায়ী। খুব ভুল করসে ফেইসবুক এই হা হা রিয়েক্ট দিয়ে। এইযে এন্ড ইউজাররা ফেসবুকের এক টুকরা রিয়েকশনকে গুরুত্ব দিয়ে গাছে তুলে দিবে, এটা কি ওরা বুঝতো?

শিট! বুঝতো প্রবাবলি। এজন্যেই দিসে।

তার ফলে হইসে–কেউ হা হা রিয়েক্ট দিলেই সে বেয়াদ্দফ, ধর্ষক, দেশদ্রোহী, নাস্তিক, পাকিস্তানের দালাল, ইন্ডিয়ার দালাল, মূর্খ, অর্বাচীন, খুলি, গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখবেন এবার এখানে কয়েকটা শব্দকে কেনো খেলো করা হইসে এই স্যাটায়ারে ব্যবহার করে সেটা নিয়ে মানুষের চুলকানি বাধবে।

এটা কিন্তু আমাদের সামাজিক এক্সেপ্টেন্সের, টলারেন্সের সীমা নির্দেশ করে। আমরা একটা হাহা রিয়েকশন নিতে পারতেসি না। একটা হাহা রিয়েক্ট, অর্থাৎ বিরুদ্ধমত, অর্থাৎ স্যাটায়ার আমাকে তার থেকে আলাদা করে দেয়, একটা শত্রু বানায়ে দেয়–সে আর আমার কেউ থাকে না। তাহলে আমি তাকে আমার সমাজের অংশীজন বানাবো কিভাবে? আমি তারে সহ্যই করতে পারিনা, তার বিদ্রুপ নিতে পারিনা–তার সাথে আমি আলাপ করবো কেমন করে?

এমন অবস্থায় কিভাবে সমাজ টিকে থাকবে যেখানে এক ক্লিকে, এক টাচে সম্প্রদায়বোধ ঝুরমুর করে ভেঙ্গে যায়?

এই ক্ষেত্রে উপায় কি? উপায় হচ্ছে ফেসবুককে এতো সিরিয়াসলি নিয়েন না। ফেসবুক হইতে পারে আপনার বর্জ্য প্রচার যন্ত্র। এই যে আমি আমার বর্জ্য প্রচার করলাম, শান্তি পাইলাম–আমার রাষ্ট্র-সমাজ নিয়ে পাওয়া ট্রমাটাকে বের করে দিলাম–একটা কোপিং মেকানিজম পাইলাম–এটাই আমার মনে মনে সুখ। আর যদি মানুষ কর্তৃত্ববাদ বিরোধী চর্চা, মুক্তিবাদ, বহুতবাদ, জনপন্থা এইসব শুইনা মুক্তিফোরামের হাল ধরতে আসে, বা বইটই কিনে একটা দুইটা, বা আলাপ দিতে নক দেয় মেসেঞ্জারে–তাতে হয় কিছু লাভ।

এমনে আমার অভিজ্ঞতা বলে ফেসবুকের পাবলিক কমেন্ট সেকশনে আলাপ নামের বস্তুটা সম্ভব না–কারণ সেটা একটা নগ্ন ব্যক্তিক পরিচয়কে উপস্থাপন করে। একটা পাবলিক কমেন্টে একজন মানুষ কখনো সম্প্রদায় বোধ করতে যান না, বরং নিজের মত-নিজের কাল্টের মত জাহিরি করতে যান। ডিসকোর্সে এসে কিছু শেখার মানসিকতা সেখানে সাধারণত কম থাকে। হিসেব করে চোখে পড়লো, ফেসবুক কমেন্টে প্রশ্ন যতো তার চেয়ে উত্তর বেশি। আমারও। তার মানে কমেন্টে কারও কোন প্রশ্ন নাই, বিতর্ক নাই, বিষয়টা প্যারালাল। কাজেই পাবলিক পোস্টের কমেন্ট দেখাটা ইউজলেস। এখানে ব্যক্তিক মতাদর্শ থেকেই মানুষ হাহা রিয়েক্ট গুনে খুব উড়বে, কারণ এটা তার শার্লকীয়ান শক্তিকে প্রচার করে।

আলাপ সম্ভব ছোট গ্রুপচ্যাটে, ফ্রেন্ডস অনলি পোস্টে, বিশেষত ছোট ফ্রেন্ডলিস্টে। আলাপ সম্ভব অল্প বড়ো গ্রুপে, বেশি বড় হইলে সেটাও হবে বর্জ্য প্রচার যন্ত্র। সবচেয়ে ভালো আলাপ জমে পার্সোনাল মেসেজে-মেসেঞ্জারে। কারণ সেটা একটা বন্ধ ঘর, যেখানে দুজন মানুষের ছোট একটা আপন সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। সেখানে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য থাকে, কিন্তু জাহিরি থাকেনা। এরকম এক একটা জাহিরিবিহীন স্বাতন্ত্ররক্ষাকারী কর্তৃত্ববাদহীন সম্প্রদায়ই গড়ে তোলা হবে লক্ষ্য–আর সেই নানান ধারার, নানান মতের সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ নিরসন, নিরাপত্তা প্রদান আর এক সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায়ের মাঝে মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা (তথা শিক্ষা স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক মুক্তি ইত্যাদির সুযোগ নিশ্চিত করা) রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।

সেই দিক থেকে যদি আমরা এই হা হা রিয়েক্ট নিয়ে বসে থাকি, আর বড়ো ফলোয়ার লিস্টে ডিস্কর্স করতে যাই, সেটা হবে অকাজ–শক্তিক্ষয়। বরং সেই সময়ে পাচজনরে পারসোনাল মেসেজ দিলে লাভ। তাতে নিজের জাহিরি কম হবে, কিন্তু শেখা হবে বেশি, শেখানো হবে বেশি, সম্প্রদায় নির্মাণ হবে বেশি।

কমেন্টে তবু এনগেজ করতে পারেন ইচ্ছা করলে, তবে গুড ফেইথ টেস্ট করে। তার কি আসলেই জানার ইচ্ছা আছে, নাকি জাহিরি করার জন্য আসছে। তার কি আসলেই জানানোর ইচ্ছা আছে, নাকি সে আপনাকে অপদস্ত করতে আসছে। গুড ফেইথ আছে মনে হলে আলাপ দিতে পারেন, তবে তিন নাম্বার কেউ এসে বাগড়া লাগানোর সুযোগ থাকে। কাজেই আমি বলবো নয় সেই আলাপটাও আলাদা করে মেসেঞ্জারে করেন।

এইগুলা বলার অথরিটি আমারে কে দিসে? কেউ দেয়নাই, আবার আপনি দিসেন। কারণ আমার ফলোয়ার অনেকের চেয়ে বেশি, আমার অটো তার চেয়ে ক্ষমতা বেশি। আর এই ফলোয়ারের ব্যাপারটা লোকতান্ত্রিক না, পপুলিস্ট। কাজেই নিশ্চয় আমি পপুলিস্ট। কাজেই আমি লিবারাল পপুলিজমের ভাষা বলতেসি। আমার পাঠে সেই ভাষাতে ফেসবুককে এতো সিরিয়াসলি নেবার কিছু নাই। ফেসবুক একটা মেগাফোন, একটা থ্রু এন্ড থ্রু মিম/ট্রল পেইজ না হইলেও।

সো ফেইসবুক সিটিজেনস–প্যাড়া নাই…চিল!

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.