বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদ….
শুনতেই ক্যামন যেন অদ্ভুত লাগছে না? এটি অনেকটা ঝাল রসগোল্লা কিংবা মিষ্টি কাচামরিচের মতো শোনায় না?
এটি বৈশ্বিক গণমাধ্যমের একটি ব্যার্থতা অথবা সাফল্যের প্রমাণ দেয়। আসলে তারা এমনভাবে একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার চেস্টা করে যে, সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের একটা সম্পর্ক আছে,যখনই আমরা দেখি কোন স্থানে সন্ত্রাস হচ্ছে কিংবা জাতিগত নিধন হচ্ছে আমরা আশেপাশের কোন একটা ইসলামিক গোষ্ঠির কথা শুরু করি। এজন্য হয়তো যতবার আমরা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কথা শুনি কিংবা আইসিস এর তাণ্ডবের কথা শুনি ততবার আমরা মায়ানমারের রোহিংগা সঙ্কটের কথা শুনতে পাই না।
They are branded as one of the most persecuted communities in the world and nobody knows their name. Persecution against the Rohingyas can be described in no other terms but that of ethnic cleansing and genocide.
ইশ রে ! যদি রোহিঙ্গা কমিউনিটির মানুষ গুলো “মানুষ” না হয়ে এক একটা “তেলের টাংকি” হতো তাহলে হয়তো আন্তর্জাতিক কমিউনিটি তাদের “মানুষ” হিসেবে গণ্য করতো,তাদের উপর নির্যাতন কে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করতো এবং তাদের উপর যারা নির্যাতনকরছে সেসব সন্ত্রাসবাদীদের এসে এক বালতি ‘ফ্রিডম’ দিয়ে দিতো।
কিন্তু এই যে এক বালতি “ফ্রিডম” । এটা পাবার জন্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা, আসিন উইরাথু বহুদিন ধরে চেস্টা করে যাচ্ছেন। বারাক ওবামা যখন প্রথম নির্বাচিত হন তখন তিনি বলেন আমেরিকানরা নাকি নিজেদের কালো মুসলিম রক্ত দ্বারা দূষিত করে ফেলেছে । তিনি নিজেকে “বুদ্ধিস্ট বিন লাদেন” বলে পরিচয় দেন। অবশ্য ব্যাপারটা একটু কনফিউজিং, কেননা ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে এবং আসিনের জন্য ১৯৬৮ সালে। কাজেই যদি আসিনকে যদি বিন লাদেন হতে হয় তবে ওসামা বিন লাদেনের ১১ বছর বয়েসে বিন পয়দা করা শুরু করতে হতো যেটা আসিনের মাথায় যে মানসিক বিকাশের যে ঘাটতি তা ব্যাখ্যা করতে পারতো।
“They will marry young girls with this money, and force them to convert to their religion. All of their children will be a danger to our nation. And finally, when their population rises, they’ll colonize Rakhine State. They will take over our country. It will be gone.” –Ashin Wirathu..
এইধরনের ব্যাপার স্যাপার কিন্তু আমরা এই প্রথম শুনছিনা এগুলো অনেক পুরোনো কথাবার্তা। যেগুলো আমরা অনেক মানুষের মুখে শুনি।একই ধরনের কথাবার্তা শুনেছি আমরা আইসিস এর কাছ থেকে, শিবসেনার কাছ থেকে, এবং একই কথা শুনছি আমরা আসিন ওয়াথিরু থেকে । সব ধর্মকে সব আদর্শ কে এই মূহুর্তে সারা পৃথিবীতে অতিডান রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে।
বিশ্বাস হচ্ছেনা ?
প্রমান দেই।
কিছুদিন আগে ঐতিহাসিক নির্বাচনে গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সাং সুচি নির্বাচিত হলো সেই নির্বাচনে বিরোধি দল হিসেবে ছিল অতিডান বৌদ্ধ জাতীয়তবাদী পার্টি মা বা থা। নির্বাচনে হারার পর তাদের কেন যেন মনে হলো এ যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসছে তারা আসলে তো আমাদের ক্ষমতা ক্ষয় করা শুরু করবে কাজেই আমাদের এখন ক্ষমতা জাহির করতে হবে।তখন তারা এই জন্য রোহিঙ্গা মুসলিম মানুষ নাকি বৌদ্ধ একজন নারীকে ধর্ষণ করেছে এইরকম একটা গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন করা শুরু করেছে। তারপর থেকে বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদীরা দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ধরে এই রাখাইন অঙ্গরাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর নির্যাতন করে যাচ্ছে। হত্যা, ধর্ষণ , লুন্ঠন এবং তাদেরকে ঘর থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে এবং সেই ব্যাপারে গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সাং সুচি সম্পূর্ণ নীরব।
কারণ তিনি এখন ব্যাস্ত রাজনৈতিক হিসাব করতে। কারণ তিনি জানেন যে তার ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এই উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের বা কমপক্ষে যে মডারেট বৌদ্ধ রয়েছে তাদের সাপোর্ট প্রয়োজন ।আর তার তুলনায় এই যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদেরকে মেরে ফেলা, তাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, তাদেরকে নিজেদের ঘর থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে, তাদের তো কারো ভোটাধিকার নেই। কাজেই তারা মরে যাক , তারা আগুনে পুড়ে যাক, ধর্ষিত হোক, তাতে গণতন্ত্রের মানসকন্যার কিছু আসে যায়না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোর ভোটাধিকার নেই কারণ তাদের নাগরিকত্বই নেই। মায়ানমারের সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করেনা বরং তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে, অথচ শতক শতক ধরে তারা মায়ানমারে বসবাস করছে এবং মায়ানমারে নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছে এবং এই যে বৌদ্ধ উগ্রবাদী তারা এইযে বাংলাদেশী অভীবাসী রেটরিক আরো বেশি জ্বালানী দিচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা দের কে ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া।।যতই তারা দেখছে রোহিংগা দেরকে ঠেলে দিলে বাংলাদেশে চলে যায় ততই তারা আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে এবং নতুন উদ্যমে নির্যাতন শুরু করছে।
An estimated 200,000 Rohingya ,an ethnic minority in Burma’s Rakhain State, already live in Bangladesh. Fleeing three decades of state led persicution. There are signs of public sentiments ticking in favour of providing assistance to the refugees.
তারা বলছে যে, তারা যদি মাইগ্রেন্ট হয়ে, যদি তারা দেশান্তরী হয় তাহলে তাদের জায়গা দেয়া উচিত, কেননা ইউরোপ যে এখন মধ্যপ্রাচ্যের সকল শরণার্থীকে জায়গা দিচ্ছে সেরকম ভাবে বাংলাদেশের ও উচিৎ রোহিঙ্গা দের কে জায়গা দেয়া। এটা তুলনাযোগ্য না।
কারণ হচ্ছে ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো এই পরিমাণ শিল্পায়িত যে তাদের অর্থনৈতিক চাহিদা রয়েছে সুলভ শ্রমের। বাংলাদেশ কি ততটা শিল্পায়িত যে আমরা অদক্ষ শ্রমিকদের কে চাকরীর ব্যাবস্থা করে দিতে পারবো?
আমাদের এই মূহুর্তে অদক্ষ শ্রমিকের এই পরিমাণ সারপ্লাস রয়েছে যে প্রত্যেক বছর আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অদক্ষ শ্রমশক্তিকে রপ্তানী করতে হয়। এরমধ্যে যদি আমরা নতুন করে প্রায় দেড় লাখ অদক্ষ শ্রমিক নি তাহলে তাদের কে আমরা ক্যামন করে চাকরী দিবো?
যদি আমরা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা না করি তখন কি বেকার মরিয়া মানুষ গুলো একটা নতুন সমস্যার মাঝে পড়ে যাবেনা?
একটা নতুন সংকট সৃষ্টি হবেনা সেখানে?
এরই মধ্যে কিন্তু একটা নতুন সংকট শুরু হয়ে গেছে, এই যে বেকার মরিয়া মানুষগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী গুলো, রাজনৈতিক স্বার্থপরায়ণ গোষ্ঠীগুলো এবং স্মাগলিং রিং গুলো । এরই মাঝে এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে এখানকার লোকাল স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মত পোষণ করছেন।
টেকনাফ এবং উখিয়া এলাকার মানুষজন একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে এবং ফিল্ড গবেষণায় দেখা গেছে যে এইসব এলাকার ১৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগ কে আলাদা একটা দেশ গঠন করতে চায়।
কাজেই বাংলাদেশ এখানে অবতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিরাট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী শিবিরের জায়গা করে দিয়েছে, শুনতে খুব ভালো লাগলেও বাস্তবে এটা কোন সংকট নিরসন করেনা বরং একটা নতুন দীর্ঘস্থায়ী সংকটের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের বর্ডারের বাইরে এবং ভিতরে যে সংকট টি চলছে সেটিকে চালিয়ে যেতে এই বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের উৎসাহ দিতে থাকে। কাজেই তীব্র মানবতাবাদের প্রয়োজনে আমরা এই মূহুর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শরণার্থী শিবির গড়ে তোলার একটা দাবি তুলতে পারি। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের বাংলাদেশে নামক তৃতীয় বিশ্বের একটি গরীব দেশের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হবার ছোট একটা পাঁয়তারা মাত্র। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদেরকে একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, অস্থায়ী সমাধান কে আমাদের হাতে রেখে স্থায়ী সমাধানের দিকে তাকাতে হবে।
৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন প্রত্যাবাসন ই একটি স্থায়ী সমাধান। কিন্তু এরই মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ও হয়েছিল, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সরকারের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ কিছুসংখ্যক রোহিংগা শরণার্থীকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসিত করতো। কিন্তু ২০০৫ সালে এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়, মায়ানমারে নতুন করে বৌদ্ধ উগ্রবাদের উত্থান ঘটার কারণে।
২০০৯ সালে অবশ্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণির সাথে মায়ানমারের সামরিক শাসকদের আলোচনায় এই প্রক্রিয়া আবার শুরু হওয়ার কথা আবার উঠে আসে কিন্তু সব আশায় গুড়েবালি পড়ে যখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সাং সুচি আবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন আর ভোটের হিসেব নিকেশ শুরু করেন এবং তার গণতান্ত্রিক দলের প্রচেস্টায় সিন উই থারু সামরিক শাসকদের জেল থেকে বের হয়ে আসেন এবং নতুন করে মুসলমানদের জাতিগত নিধন করার জন্য উস্কানী দেয়া শুরু করেন। তার উস্কানীতে এখনো পর্যন্ত প্রত্যেকদিন মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। ততক্ষণে সুচির নীরবতার সুযোগে রাখাইনে শতশত রোহিংগা কে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে মেরে ফেলা হচ্ছে আর ধর্ষণ করা হচ্ছে তখনো নোবেলপ্রাইজের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে “অং সাং সুচি নোবেল পুরষ্কারঃ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বপক্ষে অহিংস সংগ্রামের জন্য”।
শুধু নোবেল প্রাইজ কমিটি না, সেটা অনেক আগের কথা , এখনো এই সময় ও সারা পৃথিবীর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি মায়ানমারের এই গণহত্যা দেখেও না দেখার ভান করে আছে।আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে মায়ানমারের উপর থেকে তাদের ইকোনোমিক স্যাংকশন তুলে নিয়েছে কারণ, তাদের চোখে মায়ানমারে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। আর যতবার ইউনাইটেড নেশন কিংবা ইউএনএইচসিআর দেখছে তারা বারবার বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। তারা বাংলাদেশ কে দোষী সাব্যস্ত করছে, কেননা বাংলাদেশ তাদের সীমানা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে না।
যদি বাংলাদেশ অস্থায়ী ভাবে কিছু রোহিঙ্গা কে শরণার্থী শিবিরে জায়গা করে দেয় তবুও তা কোন স্থায়ী সমাধান নয়, স্থায়ী সমাধান আসতে হবে মায়ানমার সরকার থেকে। চাপ প্রয়োগ করতে হবে সূ চির উপর। যাতে করে তারা নিজেদের দেশে বৌদ্ধ উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুদিন আগে মালেশিয়ার সরকার মায়ানমার সরকারের নিন্দা করেছে , অথচ বাংলাদেশের সরকার এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে নিশ্চুপ। যদিও বাংলাদেশের উপর এই গণহত্যার দোষ সরাসরি এসে পড়ছে এবং সারা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ খলনায়ক হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। কেন আমরা এখনো আওয়াজ তুলছিনা? কেন আমরা রাষ্ট্র হিসেবে আরো জোরদার হচ্ছিনা? কেন আমরা মায়ানমারকে একটা স্থায়ী সমাধানের নিকট যেতে বাধ্য করছিনা?
হাজার হাজার মাইল দূরের ফিলিস্তিনের জন্য আমরা দাঁড়াতে পেরেছি শুধুমাত্র মানবতার খাতিরে, সেই মানবতার খাতিরে কেন আমরা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াতে পারছিনা?
একটি ছোট দেশ হিসেবে আমরা সাহস দেখাতে পেরেছিলাম ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলে, একই ভাবে কেন আমরা মায়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছিনা?
বাংলাদেশের এখন সময় এসেছে নিজেকে দায়মুক্ত করার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে আমাদের এখন সময় এসেছে নিজেদের কর্তব্য পালন করার। অং সাং সুচির বিরুদ্ধে কথা বলার , মায়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার, বৌদ্ধ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং মানবতার পক্ষে কথা বলার ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
Introduction লিখেছেঃ Neel Emon
#ShameShameSuuKyi #ছি_ছি_সু_চি #Rohingya
চরমচিত্র ৬ঃ রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং সু চি-র অশুচি নিরবতা…