আজকের ভিডিওটি ২ ধরনের মানুষের জন্য,
১. যারা আমেরিকার ইলেকশন তথা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে খুবই চিন্তিত।
২.যারা পাকিস্তান ও সেখানের সব মানুষকেই ঘৃনা করেন, কারন হয় তারা ৭১ এর জন্য লজ্জিত নয় অথবা তারা ৭১ এর ঘটনা সম্বন্ধে জানেই না।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গত রবিবারে পুড়িয়ে দেয়া সাঁওতালদের ঘরের ছাইয়ের গন্ধ এলাকা ছাড়েনি।পুলিশি পাহারায় সুগারমিল কর্তৃপক্ষের লোকজন যখন সেখানে আখ কাটতে যায় তখন সাঁওতালেরা বাধা দিলে বাধে এ সংঘর্ষ। ফলাফলে পুলিশের উপস্থিতিতেই সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেয়া হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এ খবর বাংলাদেশের গনমাধ্যম বা গণমানুষ, কাউকেই উদ্বিগ্ন করেনি।আমরা লাফাচ্ছি আমেরিকার প্রেসিডেন্সি নিয়ে।
আচ্ছা আমরা কি ভেবেছি একবারো আসলে কিভাবে ট্রাম্পেরা প্রেসিডেন্ট হয়?
আমরা যদি আমেরিকার ইলেক্টোরাল ম্যাপ দেখি,তবে দেখবো যে-যেখানে যেখানে শহর আর ইউনিভারসিটি, সেখানে সেখানে হিলারি ভোট পেলেও গ্রামাঞ্জল বা মফস্বল এলাকায় এগুলেই সেখানে দেখা যায় সব ভোট ট্রাম্প পেয়ে বসে আছে।এর কারণ হচ্ছে,এই যে, স্ট্যাব্লিশমেন্ট এর পলিটিশিয়ানরা,মিডিয়ারা সারাটা বছর এই শহরকেন্দ্রীক রাজনীতি ও উন্নয়ন কাজ করে যান। গড়ে ওঠে শহরকেন্দ্রীক গনমাধ্যম,শহরকেন্দ্রীক প্রশাসন।ফলে ইউরোপের ব্রেক্সিটের ঘটনা সেই এস্ট্যাবলিশমেন্টে প্রাধান্য পেলেও প্রান্তিক সাধারনর গল্প সেখানে বিলুপ্ত হয়ে যায়।ফলে শহুরে আর প্রান্তিক জনতার মাঝে এক বিশাল দেয়াল তৈরী হয়। বৈষম্যের দেয়াল।আর সেইখান থেকে তৈরী হয় একদলা ক্ষোভ,যারই ফলাফল আমেরিকার ইলেকশন।
এবার ভাবুন তো,এই একই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কতটা ভয়াবহ!এই গোবিন্দগঞ্জের মানুষগুলো, প্রান্তিক সাধারনরা যখন তাদের পাশে পাইনা,সরকার, দেশ কিছুই পাশে পায়না,খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করে-কেই কোন সাহায্য করতে আসেনা তাদের। আর তাও বেসরকারি উদ্যোগে যা কিছুটা আসে,তা তাদের দেয়া হয়না তখন তাদের অনুভূতিটা কী হবে!! এই বাংলাদেশ কি তাদের নয়?
এবার আসুন প্রশাসনের তামাশা দেখি।রংপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আব্দুল আওয়াল সাহেবের আকাশকুসুম কথায় মস্তিষ্কের নিউরনে সাইক্লোন বয়ে যাবে সন্দেহ নেই।তারা দূর থেকে দেখেছন কিন্তু কে বা কারা আগুন জ্বালিয়েছে দেখেনি।
হিরক রাজার আমলে নাহয় এমন ডাহা মিথ্যা চিপা দিয়ে বের হয়ে যাইতো কিন্তু এখন কি আর তা দিয়ে হয়? ভিডিও ফুটেজে খুবই স্পষ্ট যে পুলিশি পাহারায় সবার সম্মুখে আগুন দেয়া হয়েছে।
তবে সব যুক্তি প্রমাণ ছাড়িয়ে পাগলামির মাত্রা শীর্ষে নিয়ে গেছেন এই এলাকার সংসদ সদস্য।
“ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই এলাকায় ছিলাম না আমি।আমার ছেলেব টাঙাইল ক্যাডেট একাডেমীতে কোচিং করছে। আমার স্ত্রী সেখানে। আমি সেখানে ছিলাম”
৩ জন মানুষ তার এলাকায় মারা গেলো আর ছেলেকে নিয়ে সংসদ সদস্য কোচিং এ।
যাহোক এ নিয়ে আর কি বা বলবো! বাংলাদেশের প্রতিটি সাধারন মানুষের জন্য কোচিং এখন একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু জুলাই মাসেও একই ধরণের অগ্নিসংযোগ হলে তখনো তিনি ছিলেন ঢাকায়।মজার না? এলাকায় কিছু হলেই সংসদ সদস্য এলাকা বাদে ঢাকা না হয় টাঙাইল।
আর এইদিকে আব্দুল আওয়াল (সুগারমিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক)সাহেব এর মতে পুরা বাংলাদেশ থেকে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে নাকি প্ররোচিত করে সন্ত্রাস গোষ্ঠী এ এলাকায় এনে জড়ো করেছে- যাতে এই জমি দখল করা যায়।
অথচ ইতিহাস বলছে শতক শতক ধরে সাঁওতালদের পূর্বপুরুষরা এ জমিতে বসবাস করে আসছে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার এদের কাছ থেকে এই জমি অধিগ্রহন করে একটা সরকারী সুগার মিল বানাবার জন্য।কিন্তু কদিনবাদে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার তা লিজ দিয়ে দেয় আর এই লিজওয়ালারা ভূমি অধিগ্রহনের শর্ত ভেঙে এখানে আখ বাদে অন্যান্য ফসল ফলানো শুরু করে।কিন্তু আইনানুসারে অধিগ্রহনের শর্ত না মানলে জমি আগের মালিকের কাছে চলে যাবার নিয়ম,আর সেই মালিক হচ্ছে এই সাওতাল জনগোষ্ঠী।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা নিজে থেকে সেই জমিতে ফেরত যেতে চায়নি,ব্রং ইলেকশনে জেতার লোভে বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেব তাদের এ জমি ফিরিয়ে দেয়া ও এজন্য যাবতীয় দেখভালের দায় দায়িত্ব নিজে নিয়ে এদেরকে এই জমিতে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু যেহেতু তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি সেহেতু চেয়ারম্যান হবার পরেই তিনি নিজেই সেই প্রতিশ্রুতি ভাংতে দেরী করেন নি। সংবাদপত্রের মতে, তিনিই নিজ দায়িত্বে নিজস্ব গুন্ডা নিয়ে এসকল মানুষদের ঘরবাড়ি সব ধ্বংস করিয়েছেন,আগুন দিয়েছেন।আর সেখানে যখন সাঁওতাওলরা প্রতিবাদ করতে গেছে তাদের তীর ধনুক নিয়ে,তখন তাদের উপর গুলি বর্ষণ করা হয় যার ফলে ৩ জন মানুষকে মৃত্যবরণ করতে হয়েছে।
তখন থেকে আমাদের সরকার প্রশাসন এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেবার এতটা চেষ্টা করছে যে কদিন পর পর এদের মৃতদেহ খালে বিলে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে।
শুনে মনে হয় এটা ২০১৬ সালের বাংলাদেশ?মনে হয়না,১৯৫২ সালের পূর্ব পাকিস্তান?
মনে কি পড়েনা সেই “কবর” নাটকের কথা?
আর এখানেই আমার এই ২য় গোত্রের মানুষদের সাথে সমস্যা যারা কিনা সকল পাকিস্তানিদের ঘৃনা করেন কারণ তারা তাদের দেশের গনহত্যার কথা জানেনা।সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেনা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য।কিন্তু তারা নিজেরাই আবার জানতে চান না যে বাংলাদেশের সরকার কিভাবে দেশের সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন করে আর কিভাবে বাংলাদেশের সরকারী কতৃপক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ লুট করে। তারা জানতে চান না,কারন না জানাটা তাদের কাছে র্যাশনাম, যেমনটা একাত্তরের গণহত্যার কথা না জেনে বসে থাকা পাকিস্তানিদের জন্যে র্যাশনাল….কারন যদি তারা না জানেন তাহলে তাদের উপরে কোনো দায় নাই।
তবে র্যাশনাল ইগনোরেন্স যেমন র্যাশনাল, র্যাশনাল নলেজও র্যাশনাল।.অন্যদের সমস্যা অন্যদের জীবনের সুবিধা অসুবিধা যখন আমাকে চিন্তিত করবে, তখনই আমার সমস্যাও অসুবিধা যন্ত্রনা তাদের ব্যথিত করবে।
আমরা একটা দেশ।আমি আপনি আমরা প্রত্যকেই মিলে একটি দেশ এবং রাষ্ট্র যাতে কোনোভাবেই আমাদের এই দেশটার একতার মাঝে শহর আর গ্রামের সেই বিশাল বৈষম্যের,বিভেদের দেয়াল তৈরী করতে না পারে আর সেই বিভেদকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে,নিজেদের রাজনৈতিক স্বাথে আমাদের ব্যবহার করতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব আমাদের। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াবে আর রাষ্ট্রককে বাধ্য করবে মানুষের দাঁড়াতে…
রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে দেশ,
প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে জনতা,
আর বাংলাদেশীর পাশে বাংলাদেশী।
#CountryOverState
#PeopleOverEstablishment
#CitizenBesideCitizen
ইন্ট্রোডাকশন ট্রান্সক্রিপ্টঃ Ashraf Sehba Tabil Oindry
গবেষণা সহায়তাঃ Ryan Ahmed Orko, Maha Mirza
কৃতজ্ঞতাঃ বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র – Center for Bangladesh Studies(CBS)
শীর্ষ সঙ্গীতঃ স্বরব্যাঞ্জো – Swarobanjo