
অনুপম দেবাশীষ রায় রায়ের গবেষণা: বাংলাদেশে সামাজিক আন্দোলনের নতুন বিশ্লেষণ
অনুপম দেবাশীষ রায় যদিও অনেকের কাছে একজন এক্টিভিস্ট হিসেবে পরিচিত, তবে তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল একাডেমিক, যিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৌলিক জ্ঞান উৎপাদনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। একাডেমিক শব্দটি হয়তো অনেকের কাছে পরিচিত হলেও এর প্রকৃত গুরুত্ব অনেকে অনুভব করতে পারেন না। একাডেমিক তিনি, যিনি ব্যক্তিগত পক্ষপাত যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে পদ্ধতিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণ-সাপেক্ষ জ্ঞান উৎপাদন করেন।
এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো তাঁর সাম্প্রতিক বই “বিদ্রোহ থেকে বিপ্লব: নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে জুলাই অভ্যুত্থান”। এই বইটি প্রকাশের আগে তিনি আমাকে শেয়ার করেছিলেন এবং মতামত চেয়েছিলেন। আমি তখন আমেরিকার আটলান্টায় আমার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে বসে তুষারপাত দেখছিলাম। মিস্টার রায়ের লেখা সহজ, সরল এবং মেদহীন। হাতে পাওয়ার পরই আমি বইটি একটানা পড়ে শেষ করি। তাঁর লেখা আমাকে বাংলাদেশের আন্দোলনের উত্তাল সময়গুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
মিস্টার রায় বইটিতে একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন কীভাবে নতুন প্রজন্মের সামাজিক আন্দোলন পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে একটি নতুন নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করেছে। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বাংলাদেশে একটি নতুন প্রজন্ম নিজেদের রাজনৈতিক স্বত্বা আবিষ্কার করেছে ও এর মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমি মনে করি বইটি সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।
Order an autographed copy: https://forms.gle/HFuDofGM1y8PjNjK7
মিস্টার রায় আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের কেবল বর্ণনা দেননি; তিনি এর অন্তর্নিহিত কাঠামো এবং ইন্টারনেটের ভূমিকা নিয়েও বিশ্লেষণ করেছেন। ইন্টারনেটের সাথে বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলনের মিথস্ক্রিয়ার যে চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। উদাহরণস্বরূপ, ম্যানুয়েল ক্যাসেলসের নেটওয়ার্ক সোসাইটি তত্ত্ব অনুযায়ী, ইন্টারনেট একটি বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করে যেখানে সমাজের প্রান্তিক কণ্ঠস্বরগুলো জোরালো হয়ে ওঠে। মিস্টার রায় দেখিয়েছেন, কীভাবে এই নেটওয়ার্ক সোসাইটি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মতো বৃহৎ আন্দোলনগুলোকে সংঘটিত করতে ভূমিকা রেখেছে।
তাঁর গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক উভয় ধরনের তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার। তিনি উন্মুক্ত অনলাইন জরিপ এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যা তাঁর গবেষণাকে আরও গভীরতা এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করেছে। তাঁর পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ বইটিকে শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক নয়, বরং সমালোচনামূলক আলোচনার একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছে।
মিস্টার রায় তাঁর বইয়ে সামাজিক আন্দোলনের দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক পুনর্বিচার করেছেন। চার্লস টিলির “সোশাল মুভমেন্ট থিওরি” এবং অ্যান্তোনিও গ্রামশির হেজিমনি তত্ত্বের আলোকে বলা যায়, এই আন্দোলনগুলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অভ্যন্তরে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে। রায়ের কাজ এসব তত্ত্বের সাথে বাংলাদেশের বাস্তবতার একটি সংযোগ তৈরি করে।
আমি আশা করি, মিস্টার রায় ভবিষ্যতেও এই গবেষণা চালিয়ে যাবেন এবং বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনগুলোকে বৃহত্তর আন্তঃবিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে তাত্ত্বিক কাঠামোতে উপস্থাপন করবেন। তাঁর এই প্রয়াস সামাজিক আন্দোলনের গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মিস্টার রায় এবং তাঁর বইয়ের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা।
আসিফ বিন আলী
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, আটলান্টা, আমেরিকা
Order an autographed copy: https://forms.gle/HFuDofGM1y8PjNjK7